আয়াতুল কুরসি বাংলা ও আরবি উচ্চারণ। এবং আয়াতুল কুরসির ফজিলত

অনেকেই আরবি জানেন না, তাই আপনাদের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ এবং এর বিবরণ এবং আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ সঠিক ভাবে তুলে ধরার করবো ইনশাআল্লাহ।

শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার আয়াত: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। [মুসতাদরাকে হাকিম]। তাই এখনই পবিত্র আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ মুখস্থ করে নিন।

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ 

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বিয়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।

‪অর্থ‬: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়।
তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি – 

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

 

আয়াতুল কুরসি আরবি – 

اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ
لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ
مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ
وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا
وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم

আল-বাক্বারার – ২৫৫

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্কাইয়্যুম। লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিসসামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা শা’আ,ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।

আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থঃ

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তার। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তার জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তার কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তার পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরসির ফজিলত

জান্নাতের দরজা

আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল্ জামে :৬৪৬৪) হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাত প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (সুনানে বাইহাকী )

আরও পড়ুন – নামাজের সময়সূচি ১২ জুলাই ২০২২। ০৫ ওয়াক্ত নামাজের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি

মর্যাদাসম্পন্ন মহান আয়াত

আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) নবী (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসূল (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসী। (নাসায়ি) উবাই বিন কাব থেকে বর্ণিত:নবী (সা.) উবাই বিন কা‘বকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “ তোমার কাছে কুরআন মজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন: (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়্যূল কাইয়্যূম) তারপর রাসূলুল্লাহ্ নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেন: আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ”।সহীহ মুসলিম ১৭৫৫)

ফেরেশতা নিযুক্তকারী আয়াত

আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন দেখতে পেলেন একজন আগন্তুক সদকার মাল চুরি করতেছে তখন তিনি আগন্তুকের হাত ধরে বললেন, “আল্লাহর কসম ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব ”।তখন আগন্তুক বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন ।তাই দয়া করে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন । পরদিন সকালে রাসূল (সাঃ) এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন “গতকাল তোমার অপরাধী কি করছে ?” আবু হুরায়রা (রাঃ)তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন । রাসূল (সাঃ) বললেন , “অবশ্যি সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে ।” পরদিন আবু হুরায়রা (রাঃ) চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবার ও চুরি করতে আসল তখন তিন তাকে পাকড়াঁও করলেন আর বললেন “এবার অবশ্যই ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব ।” এবার ও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর শপথ করে যে আর আসবে না ।

আয়াতুল কুরসি

পরদিন আবার ও রাসূলের তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বলেন, “ আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে ।” পরদিন ও আবার আবু হুরায়রা (রাঃ) চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবার ও চুরি করতে আসল তখন তিন তাকে পাকড়াঁও করলেন আর বললেন “এবার অবশ্যই ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব ।তুমি বার বার শপথ কর আর চুরি করতে আসে ।” চোর যখন দেখল এবার সে সত্যিই রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাবে তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে , “আমাকে মাফ কর ।আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন ।” আবু হুরায়রা (রাঃ) সেটা জানতে চাইলে চোর বলে ; “যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল……) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহাড়াদার নিযুক্ত করবে যে তোমার সাথে থাকবে আর কোন শয়তান সকাল পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারবে না ।” এটা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন ।

পরদিন রাসূল (সাঃ) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন ।তখন রাসূল (সাঃ) বললেন ; “ যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে ।” রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন ;“তুমি কি জান সে কে ?” আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন ; “ না ।” রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন , “সে হচ্ছে শয়তান ।” [সহীহ বুখারী নং ২৩১১][২][৩]

শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার আয়াত

আরও পড়ুন – Kalima Shahadat – কালিমা শাহাদাত আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ

হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত :রাসুল (সা.) বলেছেন:সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম:২১০৩)[২][৩]
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাকত। একরাতে সে পাহারা দেয়। হঠাৎ যুবকের মত এক জন্তু দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয় । তিনি বলেন: তুমি কি ? জিন না মানুষ? সে বলে: জিন। উবাই (রাঃ) তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন: এটা জিনের সুরত। সে (জন্তু) বলে: জিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী। তিনি বলেন: তোমার আসার কারণ কি? সে বলে: আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। সাহাবী বলেন: তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সে বলে: সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়্যূল কাইয়্যূম), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ্র কাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। রাসূলুল্লাহ্ বলেন: খবীস সত্য বলেছে” ( সহীহুত্ তারগীব:১/৪১৮)[২]

আয়াতুল কুরসির অঙ্গ রয়েছে

উবাই বিন কাব থেকে বর্ণিত:নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহর কসম!যার হাতে আমার প্রাণ আয়াতুল কুরসীর একটি জিহবা ও দুটি ঠোট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকে। মুসনাদে আহমদ: ২১৬০২[২]

 

Leave a Comment