রোমান্টিক স্ট্যাটাস – ইসলামে কি রোমান্টিকতা নেই?

রোমান্টিক স্ট্যাটাস

—আচ্ছা, ইসলামে কি রোমান্টিকতা আছে?
এটা কোনও প্রশ্ন হলো? রোমান্টিকতা নেই মানে, আলবৎ আছে।
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)।
তার কথা মনে হলেই হৃদয়পটে ভেসে ওঠে আব্বাসী খলীফার দরবার।
একজন বৃদ্ধকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে।
আর তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলছেন:
-কুরআন কারীম মাখলুক নয়।
-আমাকে কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণ দাও।
.
অথবা হৃদয়পটে ভেসে ওঠে, একজন আলিম মসজিদে বসে হাদীস ও ফিকহের দরস দিচ্ছেন।
হাজার হাজার ছাত্র তাকে ঘিরে রেখেছে।
.
এমন একজন মানুষ রোমান্টিকতার ওপরও ক্লাস নিচ্ছেন, ছেলেকে প্রেম নিবেদন শেখাচ্ছেন, ভাবা যায়?
বাস্তবে তাই ঘটেছে।
একটা বর্ণনায় এমনি একটা ঘটনা পেলাম।
মুল ভাব ঠিক রেখে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি।
.
ইমাম সাহেবের ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক।
একদিন ফাঁক করে পুত্রকে ডেকে পাশে বসালেন।
আন্তরিক ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেন:
— ওয়ালাদী! (হে আমার বৎস!) তুমি কি সুখী হতে চাও?
— না‘আম ইয়া আবী! (হ্যা অবশ্যই আব্বু)
— তাহলে তোমাকে তোমার হবু জীবনসঙ্গীনির জন্যে দশটা বিষয় নিয়ে যেতে হবে।
—কী সেগুলো? কোথায় পাওয়া যাবে?
—তোমাকে কোথাও যেতে হবে না।
কিনতেও হবে না।
আমার কাছে, তোমার কাছে, সবার কাছেই সেগুলো আছে।
সবাই ব্যবহার করতে পারে না, এই যা।
চলো দেখা যাক, অমূল্য সেই দশটা বিষয় কী?
.
———–
প্রথম ও দ্বিতীয়: নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে।
খুনসুটি-রসিকতা পছন্দ করে।
নখরা-ন্যাকা তাদের স্বভাবজাত।
তারা ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে খুবই পছন্দ করে।
তুমি একান্তে তোমার স্ত্রীর কাছে এসব প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবে না।
তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে।
যদি এসবে কার্পন্য করো, তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তোমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে।
এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে।
ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজবে।
———–
তৃতীয়: নারীরা কঠোর-কর্কশ-রূঢ়-বদমেজাযী-রুক্ষ্ণ স্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না।
তুমি তোমার মধ্যে যদি এমন কিছু থেকে থাকে এখনই ঝেড়ে ফেল।
কারণ তারা সুশীল, ভদ্র, উদার পুরুষ পছন্দ করে।
তুমি তার ভালোবাসা অর্জনের জন্যে, তাকে আশ্বস্ত করার জন্যে হলেও গুণগুলো অর্জন করো।
———–
চতুর্থ: এটা খুব ভাল করে মনে রাখবে, তুমি তোমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন-সুন্দর-পরিপাটি-গোছালো-সুরুচিপূর্ণ-সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তোমার স্ত্রীও কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়।
তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন, কোনও অবস্থাতেই, তোমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।
———–
পঞ্চম: ঘর হলো নারীদের রাজ্য।
একজন নারী নিজেকে সব সময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে।
সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে,সাজায়,রচনা করে।
তুমি খুবই সাবধান থাকবে! কখনোই তোমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেওনা।
এমনকি তাকে তার সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াসও চালাবে না।
তুমি তো জানোই, আল্লাহ তা‘আলার কাছে, সবচেয়ে অপছন্দীয় বিষয় কী?
— তার সাথে কোনও কিছুকে শরীক করা।
— হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। একজন রাজার কাছেও সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় কী?
— তার রাজ্যে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করা।
———–
ষষ্ঠ: নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে-সর্বান্তঃকরণে প্রবলভাবে কাছে পেতে চায়।
পাশাপাশি তার বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না।
হুশিয়ার থেকো বাবা!
তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিওনা।
তুমি এ অন্যায় দাবীও করে বসো না:
— হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে।
তুমি এ বিষয়টা এমনকি চিন্তাতেও স্থান দিও না।
যদি তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করোও, সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নিবে, কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা-বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে।
তোমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে চারিয়ে উঠবে।
————
সপ্তম: তুমি জান, অনেক শুনেছ, পড়েছ: নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাঁজরের) বাঁকা হাড় থেকে।
এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য।
তুমি চোখের ভ্রু লক্ষ করে দেখেছো? সেটার সৌন্দর্যটা কেথায়?
—বক্রতায়।
— একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভ্রুকে সুন্দর করে তোলে। ভ্রুটা যদি সোজা হতো, দেখতে সুন্দর লাগতো না।
যদি তোমার স্ত্রী কোনও ভুল করে ফেলে, সাথে সাথেই অস্থির হয়ে, রেগেমেগে তাকে হামলা করে বসো না।
উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সোজা করতে যেয়ো না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যেতে পারে।
আর ভাঙা মানে বোঝোইতো: তালাক।
আবার সে অনবরত ভুল করে যেতে থাকলে, কিছু না বলে, ভেঙে যাওয়ার ভয়ে, লাগামহীন ছেড়েও দিও না।
তাহলে তার বক্রতা আরও বেড়ে যাবে।
সে নিজের ভেতরে গুটিয়ে যাবে।
তোমার প্রতি তার আচরণ উদ্ধত হয়ে যাবে।
তোমার কথায় কান দিবে না।
— আমি তাহলে কী করবো?
— তুমি মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে।
———–
★ অষ্টম: তুমি হাদীসটা পড়ো নি?
—কোনটা আব্বাজান?
— ঐ যে, যার ভাবার্থ হলো:
নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়।
তার প্রতি অতীতে কৃত সদ্ব্যবহার-সদাচার ভুলে যায়।
তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করো, হঠাৎ একদিন কোনোক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেলেছো, ব্যস অমনিই সে নাকের জল চোখের জল এক করে বলবে:
— আমি তোমার কাছ থেকে কখনোই ভালো কিছু পাইনি।
দেখো বাছা! তুমি তার এই আচরণে রুষ্ট হয়ো না।
তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি মনে বিতৃষ্ণা এনো না।
তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে তুমি অনেক এমন কিছু পাবে যা তুমি শুধু পছন্দই করো না, তার জন্যে তুমি জানও লড়িয়ে দিতে পারো।
—————
নবম: নারীদের শরীর-মনের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না।
একেক সময় একেক রকম থাকে।
প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে।
অনেক সময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে।
তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামায মাফ করে দিয়েছেন।
রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য ও মেজায ঠিক হওয়া পর্যন্ত।
তুমি তো রাব্বে কারীমের বান্দা।
তুমিও তোমার রবের গুণে গুণান্বিত হও।
রব্বানী হও।
তুমি তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহূর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে।
তোমার আব্দার-আবেগ শমে রেখো।
তোমার রবও খুশি হবেন, তোমার রাব্বাহও খুশি হবে, কৃতজ্ঞ হবে।
———–
দশম: সব সময় মনে রেখো, তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, বিভিন্নভাবে তোমার মুখাপেক্ষী।
তোমার সুন্দর আচরণের কাঙাল।
তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে, তার প্রতি অনেক বেশী মনোযোগ দিবে, তাকে আপন করে নিবে।
তাহলে সে তোমার জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে।
তাকে অনুপম সঙ্গী হিশেবে পাবে।

Leave a Comment