গান-বাজনা ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ

গান-বাজনা ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ

বর্তমানে এই ফেৎনা-ফাসাদের যুগে আমাদের
আসে পাশের মানুষ গুলো কেমন যেন গুনাহের সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে!
কেমন যেন প্রতিটা কদমে কদমে তাদের গুনাহ না করলে হয় না।
আসলে কেমন যেন আমরা পশ্চিমা ভক্ত হয়ে গেছি;
আল্লাহ ও তার রাসূল ভক্ত নেই!
যেখানে আমরা আমাদের জীবনের প্রতি কদমে
আমাদের আল্লাহ এবং তার হাবিব কে অনুসরণ
করবো সেখানে আমরা কি না ঐ পশ্চিমা দের অনুসরণ করতেছি!
এটা আমাদের জন্য কতোটা দুঃখ জনক?
একটি বার কি ভেবে দেখেছি?
নাহ আমরা এটা ভাবতে চাইনা একটিবারের জন্য ও।

আজ আমরা রাসূলের সুন্নতি পোশাকাদি কে ছেড়ে দিয়েছি,
রাসূলের সুন্নত কে ছেড়ে দিয়েছি,
রাসূলের আদর্শ কে ছেড়ে দিয়েছি,
একদম সবই ছেড়ে দিয়েছি আমরা।
আমাদের মাঝে মুসলমান এর বিন্দু মাত্র নাম নিশানা খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে।
আফসোস করে বলতে হয়;
আজ আমরা শুধু নামেই মুসলমান রয়েছি।
হায়!
আজ আমরা কোন একটা ভালো-বরকতময় কাজ করতে
গেলে ও সেখানে অনিসলামিক কাজ না করলে আমাদের হয় না।

“বিবাহ” একটি বরকতময় কাজ,
আল্লাহ তায়ালার রাসূল (স,) এই বিবাহ কে
“ঈমানের অর্ধেক” বলেছেন।
আজ আমরা এই বরকতময় কাজ টি কে ফেতনা-ফাসাদের এক তান্ডবলিলা হিসেবে তৈরি করেছি।
বিয়ে তে অধিক খরচাদি না করলে/বিয়ে তে গান
বাজনা না করলে কেমন যেন বিয়েই হলোনা আমাদের।
অথচ বরকতময় বিয়ে তো হলো সেই বিয়ে!
যেই বিয়েতে সবচেয়ে কম খরচাদি করা হয়;
বিয়ে বাড়িতে গান বাজনা করা টা কেমন যেন আমাদের সমাজে একটা কমন ব্যাপার হয়ে গেছে।
এটাকে তারা বিয়ের একটা অংশ হিসেবেই বানিয়ে ফেলেছে।
আচ্ছা!
বিয়েতে কি গান বাজনা করা এতটাই জরুরী!
না করলে কি হয়না?
আসুন গান-বাজনা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটা একটু জেনে নিই।

★কুরআনের ভাষ্য : আল্লাহ তাআলা সূরা লুকমানে
আখেরাত-প্রত্যাশী মুমিনদের প্রশংসা করার পর
দুনিয়া-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে বলছেন,

আর একশ্রেণীর লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত
খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর
পথ থেকে গাফেল করার জন্য।
–সূরা লুকমান : ৬

উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে,
নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা
বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল।
কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান
শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং
বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে।
এতে শুধু কষ্টই কষ্ট।
তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ
কর।
–মাআরিফুল কুরআন ৭/৪
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত
নাযিল করেন।

★সাহাবী ও তাবেয়ীদের ব্যাখ্যা:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত
আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর
রা. একই কথা বলেন।
তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত
বর্ণিত হয়েছে।
বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, উক্ত
আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল
হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়।
–তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১

#কুরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে,
ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার
আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে
বললেন,
★তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে
পারিস পদস্খলিত কর।
–সূরা ইসরা : ৬৪

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ।
বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন,
ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার
অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের
দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা।
এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
–ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯

★সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র।
যথা :
ক) নিফাক এর উৎস
খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী
গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী
ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী
ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।
–ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭

বস্তুত গান বাজনার ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে,
তা নাজায়েয হওয়ার জন্য আলাদা কোনো দলীল খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না।
এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের মাধ্যমে তা প্রমাণিত।

★হাদীসের ভাষ্য:
গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না।
আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই।
জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।
–জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২
–ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮

বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন-

আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে।
আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে।
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।
–সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০
–সহীহ ইবনেহিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।
–ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩
–তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২

উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার।
গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে,
সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে
এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।

সহীহ বুখারীতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে,
যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল
সাব্যস্ত করবে।
–সহীহ বুখারী হাদীস : ৫৫৯০

মুসনাদে আহমদের হাদীসে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তাআলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত
ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ
ও জাহেলি প্রথা বিলোপসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।

★গান-বাজনা সম্পর্কে চার ইমামের ভাষ্যঃ
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা,
ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে
হাম্বল (রহিঃ) এক ও অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।
সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

# ইমাম মালেক (রহিঃ)-কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে
প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেনঃ
‘কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।’
***কুরতুবীঃ ১৪/৫৫।

#ইমাম শাফেয়ী (রহিঃ) বলেছেন যেঃ
‘গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।’
তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী,
ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর
শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।’
***ইগাছাতুল লাহফানঃ ১/১৭৯; কুরতুবীঃ ১৪/৫৫।

# হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা
আলী মারদভী লিখেছেন যেঃ
‘বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য
থাকে তবে তা হারাম।’
***আহসানুল ফাতাওয়াঃ ৮/৩৮৮।

#ইমাম শাফেয়ী (রহিঃ) শর্ত সাপেক্ষে শুধু ওলীমা
অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত
দিয়েছেন।
কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার
অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা
হাদীসে রয়েছে।
***জামে তিরমিযীঃ ১০৮৯; সহীহ বুখারীঃ ৫১৪৭,
৫১৬২।

মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য
হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।
***ফাতহুল বারীঃ ৯/২২৬।
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল কে বুঝার এবং
মানার তৌফিক দান করুন।
আমীন।

Leave a Comment