ইসলামিক গল্প – একজন সংশয়বাদীর সাথে আমার কথোপকথন!

ইসলামিক গল্প 

একজন সংশয়বাদীর সাথে আমার কথোপকথন!

ইসলামিক-গল্প

আজ (২/৭/২০২২ইং) সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জী বাসে ওঠলাম। বাসে ওঠে একজন ভদ্রলোকের পাশের সীটে বসলাম। লোকটি আমাকে দেখে কেমন যেন বিরক্তি বোধ করছিল। তার এ অবস্থা দেখে আমি লোকটির সাথে কিছুটা মিশতে চাইলাম। তাই ভাই বলে সম্বোধন করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম- কোথায় যাবেন? লোকটি কপাল কুঁচকে বললো- মৌলভীবাজার।
বেশ কিছুক্ষণ পর ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলো- আপনি কোথায় যাবেন? আমি মুচকি হেসে বললাম- মৌলভীবাজার। পুনরায় জিজ্ঞেস করলো- সেখানে কী করেন? বললাম- ওলী ইবনে ওলী মুফতী রশীদুর রহমান ফারুক সাহেবের মাদরাসা (শেখবাড়ি জামিয়ায়) শিক্ষকতা করি। সে বললো- ও আচ্ছা তাই!
এভাবে আরও কিছু আলাপসালাপের পর সে বললো- হুজুর! ইসলামে তো মানুষ হত্যা মহাপাপ। আমি বললাম- ১০০% সত্য কথা বলেছেন। লোকটি বললো- তাহলে মুহাম্মদ (সাঃ) সাধারণ কয়েকটি উট চুরি করার অপরাধে অপরাধীদেরকে কেন নির্মমভাবে হত্যা করলেন?
আমার তখন বুঝার বাকি রইলো না যে, লোকটি হয়তো নাস্তিক, নয়তো সংশয়বাদী। আমি বিনয়ের সাথে বললাম- ঘটনাটি একটু খুলে বলুন। ভদ্রলোকটি বললো- কেন, আপনি বোখারী শরীফ পড়েননি? আমি বললাম, তা তো অবশ্যই। তবে বোখারী শরীফে এরকম ঘটনা পাইনি যে, কেবল উট চুরির অপরাধে কাউকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন বা সাজা দিয়েছেন। তবে আমি ভিন্ন রকমের ঘটনা পেয়েছি। সেটা হলো- উরায়না গোত্রের কতিপয় লোক নবীজি সাঃ-এর দরবারে আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করলো। মদীনার আবহাওয়া তাদের মাফিক না হওয়ায় তারা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
নবীজি সাঃ তাদেরকে একটি মাঠের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন- ওখানে সদকার কিছু উট রাখা আছে। তোমরা ওগুলোর দুধ ও পেশাব পান করো। ইনশাআল্লাহ তোমরা সুস্থ হয়ে যাবে। তারা তাই করলো। এতে তারা সুস্থ হয়ে ওঠলো। সুস্থ হবার পর এদের ঘাড়ে শয়তান সওয়ার হলো। তাই তারা মরতাদ হয়ে গেলো এবং উটগুলোর রাখালদের হত্যা করে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলো। সেই রাখালদের মধ্যে একজন কোনোরকম প্রাণে বেঁচে নবীজীর নিকট এসে ঘটনাটির বিবরণ দিলো। নবীজি শোনামাত্র কয়েকজন সাহাবীকে তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য পাঠালেন। তাঁরা ওদেরকে গ্রেফতার করে আনলেন। নবীজি তাদেরকে হত্যা করলেন।
(আমি এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বলছি)
লোকটি বললো- ঘটনা যাই হোক, এভাবে সাধারণ কয়েকটি উট চুরি করার কারণে হত্যা করতে পারেন না। আমি তখন ভাবলাম- লোকটিকে এভাবে বুঝালে বুঝবে না। তাই আমি কথার প্রসঙ্গ পাল্টে দিলাম। বললাম- ভাই! এগুলো থাক, এগুলো তো ঐতিহাসিক বিষয়। ঐতিহাসিকগণ তা ভালো বুঝবেন। চলুন, আমাদের দেশের উন্নয়ন নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলি। লোকটি বললো- দেশের তো অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিছুদিন আগে আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধন হলো। এটা আমাদের দেশের বিরাট একটা উন্নতির বিষয়।
আমি বললাম- জ্বী ভাই, আপনি সত্য বলছেন। কারণ, মানুষ আগে পদ্মা নদী পার হতো ফেরির মাধ্যমে। এখন পার হবে সেতু দিয়ে। এতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্যালুট জানাই।
হঠাৎ আমার স্মরণ হয়ে গেলো, পদ্মাসেতুর নাট বল্টু খোলার রহস্যময় ঘটনা। আমি এই মাথামোটাকে বললাম- ভাই, যে লোকটি পদ্মাসেতুর নাট বল্টু খুলেছিল, সে আপনার দৃষ্টিতে কী পরিমাণ অপরাধী? লোকটি বললো- সে তো মারাত্মক অপরাধী। বললাম- কেন? সে বললো- সে দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে তাই। বললাম- তার শাস্তি কী হওয়া উচিত? বললো- রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।
আমি বললাম- কেন ভাই! এই সাধারণ নাট বল্টু খোলার কারণে এতো বড় শাস্তি? বললো- আপনি এটাকে সাধারণ বলবেন না। সে দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে।
বললাম- আচ্ছা ভাই, আপনার কথামতে রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করার শামিল। আর তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাহলে এ বিষয়টি উরায়না গোত্রের ক্ষেত্রে বুঝেন না কেন? এখানে তো তারা একসাথে তিনটি অপরাধ করেছে- (১) রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত রাখালকে নির্মমভাবে হত্যা। ( ২) মুরতাদ হওয়া। (৩) রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করা, যা আপনার মতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এবার বলুন, ওদের অপরাধগুলো কতটুকু গুরুতর? আপনার দৃষ্টিতে ওদের কী শাস্তি হওয়া উচিত?
লোকটি এবার চেচামেচি শুরু করে দিলো। বললো- মানি আমি বলতে চাচ্ছি, নবীজি তাদেরকে ক্ষমা করতেও পারতেন। আমি বললাম- এটা তো নবীজির ব্যক্তিগত বিষয় নয় যে, তিনি ক্ষমা করে দেবেন। এটা তো আপনার দৃষ্টিতেও রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সুতরাং এটা রাষ্ট্রের বিষয়।
আমি আরও বললাম- একটা সাধারণ নাট বল্টু খোলার কারণে যদি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, তাহলে যেখানে একত্রে তিনটি গুরুতর অপরাধ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে নবীজি সাঃ অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দিবেন না তো তাদেরকে কি হালওয়া মিঠাই খাওয়াবেন?
পেছনের সীট থেকে আওয়াজ আসলো, হুজুর খুব চমৎকার যুক্তি দিয়েছেন। হুজুরদের সাথে বিতর্কে কেউ টিকতে পারবে না। আমি তখন লোকটির চেহারা মোবারকের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, চেহারাখানা মলিন হয়ে আছে। না কিছু বলতে পারছে, আর না সইতে পারছে। একেবারে লাজওয়াব।
-সমাপ্ত

Leave a Comment