আকিকার নিয়ম। জেনে নিন আকিকার দোয়া ও আকিকার নিয়ম কানুন

আকিকাহ ( আরবি: عقيقة‎‎ ), আকিকা নবজাতক শিশুর জন্ম উপলক্ষে প্রাণী কুরবানীর একটি ইসলামী প্রথা।  akikar niyom আকিকার নিয়ম : আজকে আলোচনা করতে চাই আকিকার নিয়ম কানুনআকিকার দোয়া সম্পর্কে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সন্তানের সাথে আকিকা জড়িত। অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর এবং তার থেকে কষ্ট দূর করে দাও (অর্থাৎ তার জন্য একটি আকিকার পশু যবেহ কর এবং তার মাথার চুল ফেলে দাও)। আকিকার পশু জবাই করার দোয়া। আজকে আমরা আলোচনা করব আকিকার নিয়ম কানুন এবং আকিকার দোয়া

মুসলমানগণ সন্তানের মঙ্গলের জন্য পরিবার ও বন্ধুদের জন্য একটি ভোজের আয়োজন করে। আকিকা হলো সুন্নাত আল মু’আক্কাদাহ (নিশ্চিত সুন্নত)। যদি সন্তানের অভিভাবক সন্তানের জন্য একটি ভেড়া জবাই করতে সক্ষম হন তবে তাদের এটি করা উচিত। মুহাম্মদ (সঃ)বলেন: “একটি শিশুর জন্যে আকিকা দিতে হবে, সপ্তম দিনে তার জন্য কোরবানি দেওয়া হয়, মাথা কামানো হয় এবং একটি নাম দেওয়া হয়”।

সপ্তম দিনে যদি কেউ জবাই করতে না পারে তবে চৌদ্দ দিনের দিন কেউ আকিকা করতে পারবে বা একবিংশ দিনে, যদি কেউ এটি করতে সক্ষম না হয় তবে কোনও ব্যক্তি সন্তানের যৌবনের আগে যে কোনও সময় আকিকা করতে পারে। আক্বিকাহ সুন্নত ও মুস্তাহাব ; এটি মোটেও ওয়াজিব নয়, সুতরাং কোন পাপ নেই যে ব্যক্তি এটি করে, বা যে এটি বিলম্ব করে এবং মুস্তাহাবের সময়ে তা না করে তার উপর, যদিও সে তার ফজিলত ও পুরষ্কারের হাতছাড়া করে (কেউ এটিকে স্থগিত রাখতে পারেন) যতক্ষণ না তিনি তা করতে সক্ষম হন।

আকিকার নিয়ম

আকিকার নিয়ম
Image Credit: Unsplash

আকিকার নিয়ম সঠিকভাবে 

আকিকা করা সুন্নত। সাহাবী, তাবেঈ ও ফকীহ বিদ্বানগণ প্রায় সকলেই এতে একমত। হাসান বাছরী ও দাউদ যাহেরী একে ওয়াজিব বলেন। তবে আহলুর রায় (হানাফী) গণ একে সুন্নাত বলেন না। কেননা এটি জাহেলী যুগে রেওয়াজ ছিল। কেউ বলেন, এটি তাদের কাছে ইচ্ছাধীন বিষয়।

ইবনে কুদামা, আল-মুগনী ৩/৫৮৬; নায়ল ৬/২৬০ পৃঃ।

নিঃসন্দেহে এটি প্রাক-ইসলামী যুগে চালু ছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ও ধরন পৃথক ছিল। ইসলাম আসার পর আকিকার রেওয়াজ ঠিক রাখা হয়। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ও ধরনে পার্থক্য হয়। জাহেলী যুগে আশুরার সিয়াম চালু ছিল। ইসলামী যুগেও তা অব্যাহত রাখা হয়। অতএব প্রাক-ইসলামী যুগে আকিকা ছিল বিধায় ইসলামী যুগে সেটা করা যাবে না, এমন কথা ঠিক নয়।

আকিকা কি? আকিকা কাকে বলে? 

আকিকা শব্দটি আরবি; এটি আরবি عَقٌّ শব্দ থেকে নির্গত; এর অর্থ হচ্ছে কাটা, পৃথক করা। পারিভাষিক অর্থে সপ্তম দিনে নবজাতক শিশুর মাথার চুল ফেলার সময় যবেহকৃত পশুকে আকিকা বলা হয়।

আল-মুজামুল ওয়াসীত্ব।

আকিকার সঠিক সময় 

আকিকার নিয়ম
Image Credit: Unsplash

নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। হজরত রাসূল সা: নিজে সপ্তম দিনে আকিকা করেছেন। যদি কোনো কারণে সপ্তম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে চতুর্দশতম দিনে আকিকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, একবিংশতম দিনে আকিকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, অন্য যেকোনো দিনে আদায় করে নিতে হবে। হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে’ (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩৯২)।

আকিকার গোশত বিতরণ করার নিয়ম :

আকিকার গোশত ইচ্ছে হলে রান্না করে আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-মিসকিনকে খাওয়ানো যাবে। তবে আকিকার পশুর গোশত তিন ভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য সাদকা করে দিয়ে বাকি এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া সুন্নত। আকিকার গোশত সচ্ছল আত্মীয় স্বজনকেও দেয়া যায়।

আকিকা নিয়ে হাদিসঃ


অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭২)


তাই সম্ভব হলে সপ্তম দিনেই আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ তম দিনে বা একুশতম দিনে করা ভালো। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। এবং তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৬৬৯)

গরু দিয়ে আকিকা

গরু দিয়ে আকিকা করার কোন হাদীস নেই। অথচ রাসূল (সা.)-এর যুগে সব ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। তাই ছাগল বা দুম্বা দিয়ে আকিকা করা উত্তম। একদল আলেমদের মতে, গরু দিয়ে আকিকা করা জায়েয হবে। তবে শর্ত হলো, গরুর সাথে আকিকাকে সন্তানের পাশে থাকতে হবে। পক্ষান্তরে কোন কোন আলেম বলেছেন, সাত সন্তানের পক্ষ থেকে গরু দিয়ে আকিকা দেয়া জায়েয হবে। তবে সাত সন্তানের পক্ষ থেকে গরুর আকিকা হওয়ার কথা হাদীসে পাওয়া যায় না। যেহেতু আকিকা একটি ইবাদত, সেহেতু তা হাদিসে বর্ণিত ইবাদত অনুযায়ী করা উচিত। এবং এটা মোটেই কঠিন কিছু নয়।

কুরবানীর অংশে আকিকা দেওয়া এবং আকিকার নিয়ম

আমাদের দেশে সাতভাগে গরু দিয়ে কুরবানী করার ক্ষেত্রে আকীকার অংশীদার হওয়ার নিয়ম ব্যপকভাবে প্রচলিত আছে। এটি হাদীছ সম্মত নয়। একটি গরু দিয়ে যদি একজন সন্তানের আকীকা করা যদি ঠিক না হয়, তাহলে কুরবানীর গরুর সাথে ভাগে আকীকা করা সঠিক হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সর্বোপরি, কিছু আলেম বলেছেন যে, কুরবানীর গরুর সাথে আকিকা ভাগ করা বৈধ হবে। কিন্তু তা হাদীসের সাথে একমত নয়।

আকিকা সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, শিশুর পিতা-মাতা এবং যে সন্তানকে আকিকা দেওয়া হয় তারা আকীকার গোশত খেতে পারে না। এটি একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস। এই প্রভাবের কোন প্রমাণ নেই। আগেই বলা হয়েছে, আকিকার গোশত কুরবানীর গোশতের মতো। পরিবারের সবাই খেতে পারবে।

আকিকা দিতে অক্ষম হলে

আগেই বলা হয়েছে যে, দারিদ্র্যের কারণে আকিকা দিতে না পারলে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যখনই পারবে এটা সম্পূর্ণ করে নিবে। আর যদি আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হয় এবং আকিকা দিতে না পারে তাহলে কোন গুনাহ হবে না।

আকিকার দোয়া

আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণ

আমরা আকিকার নিয়ম সম্পর্কে জানার পর এবার চলুন জেনে নিই আকিকার দোয়া –  আল্লাহুম্মা হাযিহী আকিকাতু ইবনী ফুলানিন দামুহাবিদামিহী ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহী ওয়া আজমুহা বিআযমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহী ওয়া শা”রুহা বিশার”রিহী আল্লাহুম্মাজআলহা ফিদাআল্লি ইবনী মিনান্নার।

এরপর পড়বে ইন্নিওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি অল আরদা মিল্লাতা ইবরাহিমা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন । ইন্না সলাতি ওয়া নুসুকি অমাহ ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন । লাশারিকালাহু ওয়াবিজালিকা ওমিরতু অ আনা আওয়ালুল মুসলিমীন ।আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিছমিল্লাহি আল্লহুআকবার ।বলে জবেহ করবে ।

আকিকার নিয়ম
Image Credit : Unsplash

আকিকার উপকারিতা

নবজাতক সন্তানের পিতা-মাতার উদারতা আকিকার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। গরীব, এতিম ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে গোশত বিতরণের মাধ্যমে আত্মীয়তার হক আদায় করা হয়। নবজাতক শিশুর জন্য সবাই দোয়া করবেন। আকিকাকে নতুন জীবন দান করার ফলে, আল্লাহ তায়ালা নবজাতকের উপর আসা সমস্ত বিপদ আপদ দূর করে দেন।

আকিকার কুসংস্কার

আকিকা পশুর মূল্য তার দাদার বাড়ি থেকে দিতে হয়। আকিকার গোশত পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী খেতে পারবে না। শিশুর চুল কামানোর সময় মাথার তালুতে ক্ষুর রাখতে হবে এবং আকিকা পশু জবাই করতে হবে। কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হবে। নবজাতকের কল্যাণে আকিকা করা হয়। তাই আকিকা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশ্লীল নাচ-গান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিশেষ

শিশুর নামকরণের সাথে আকিকা সম্পর্ক রয়েছে। আকিকার সঙ্গে সন্তানের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আকিকা প্রথম চুল কাটার সাথে সম্পর্ক আছে। তাই আকিকা দ্রুত সম্পন্ন করা অপরিহার্য যদি আপনার সামর্থ্য থাকে। উক্ত আলোচনায় আমরা চেষ্টা করেছি আকিকার নিয়ম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা দেওয়ার, আপনাদের কেমন লেগেছে আকিকার নিয়ম সমূহ জেনে তা নিন্মের কমেন্টস বক্সে কমেন্টস করে জানাবেন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। আমীন।

1 thought on “আকিকার নিয়ম। জেনে নিন আকিকার দোয়া ও আকিকার নিয়ম কানুন”

Leave a Comment